কোনও শিক্ষক কিংবা সম্মানিত ব্যক্তির সঙ্গে সচরাচর মুঠোফোনে কথা বলার সময় আমি বেশ কয়েকবার ‘জি স্যার, স্যার’ বলি। গৃহপরিচারিকা জানতে চায়, ‘আপু এতবার স্যার, স্যার, জি, জি করেন কেন?’ আমি তাকে উত্তর দেই, ‘যাদের সঙ্গে কথা বলি, তারা অনেক সম্মানিত ব্যক্তি।’ তখন সে বলে, ‘আপনিও তো কত সম্মানের।’ তখন বলি, ‘আমি প্রতিনিয়ত বড়দের সম্মান করার চেষ্টা করি। কারণ, আমার বাবা-মা আমাকে শিখিয়েছেন ,সব সময় মনে রাখবে, তুমি যত সম্মানের হও না কেন, অন্যেরা তোমার চেয়েও সম্মানের। অন্যকে সম্মান করলে নিজের সম্মান কমে যায় না বরং বাড়ে।’
মনে পড়ে ছেলেবেলা বাবার হাত ধরে যখন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতাম, বাবা বলতেন, চাচাকে সালাম দাও, চাচিকে সালাম দাও। আলাদা আলাদা করে সালাম দেওয়ার যে অভ্যাস, তা ছেলেবেলায় হয়েছিল। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি, যে কারণে আদব কায়দা শেখার জন্য বেগ পেতে হয়নি। মনে পড়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, পবিত্র শব-ই বরাতে বাড়ির মুরুব্বিদের সালাম করে দোয়া নিতাম। পরীক্ষায় ভালো করলে বাবা-মা-দাদিকে সালাম করতাম। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ও একই কাজ করতাম। এমনকি বাসা থেকে যখন হলে যেতাম, বাবা-মা ও দাদির দোয়া নিয়ে আসতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হওয়ার পর শ্রেণির সহপাঠী ছেলেদের ‘আপনি’ বলা শুরু করলে পরবর্তী সময়ে তারা একযোগে আমাকে ‘আপনি’ বলা শুরু করলে তখন ‘তুমি’ সম্বোধনে আসি। বিভাগের শিক্ষক ও বড় ভাই-বোনদের আগে যেমন শ্রদ্ধা সম্মান করতাম, আজ অবধি সিনিয়রদের সেই শিক্ষাজীবনের মতোই শ্রদ্ধা করে আসছি। আর এই বিনয়ের জন্য তারাও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছেড়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি প্রায় ১৬ বছর। অভিজ্ঞতা হিসাব করলে সময়টি কম নয়। কিন্তু সিনিয়রদের সামনে গেলে তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ বিষয়টি কমপক্ষে মাথায় রেখে চলি, আমি যত অভিজ্ঞ হই না কেন, যাদের সামনে দাঁড়িয়ে তারা আমার সিনিয়র।
সেই শৈশবকালে বাবা-মা শিখিয়েছেন, শিক্ষক তোমার জীবনে এক শ্রদ্ধার পাত্র। আমাদের পরেই শিক্ষকের স্থান। তাদের অসম্মান মানেই মা-বাবার অসম্মান। শিক্ষককে কষ্ট দিয়ে কোনও কাজ করা যাবে না, তার সঙ্গে বেয়াদবি দূরের কথা। কোনও অশোভন আচরণও করা যাবে না। যে শিক্ষক তোমাকে একটি অক্ষর পড়ালেন, তিনিও তোমার শিক্ষক। পরম পূজনীয় শিক্ষক তোমার মাথার তাজ। শিক্ষকের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়া জীবনে পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। সেই যে শিখে বড় হয়েছি, তা এখনও হৃদয়ে ধারণ করে বেঁচে আছি এবং সেভাবে পথ চলার চেষ্টা করছি। সত্যিই একজন যদি তার শিক্ষককে সম্মান শ্রদ্ধা করে তার ভাগ্যের ঝুলি ফুলেফেঁপে ওঠে। ব্যক্তিগতভাবে আমার জীবনে এর প্রমাণ পেয়েছি। জীবন চলার পথে আমার সব শিক্ষক আমাকে স্নেহ করেছেন, আমিও সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করার। সত্যিই একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলেন, কথাটির সঙ্গে পুরোটাই আমি একমত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমার জীবনে সার্বিকভাবে প্রভাব ফেলেছেন। সেই সঙ্গে আমার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মহাবিদ্যালয় পর্যন্ত সব শিক্ষক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছেন।
আমি তো চিন্তাই করতে পারি না আমার শিক্ষকদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবো। তাদের সঙ্গে যুক্তি-তর্ক দিয়ে বিতর্ক করবো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগে এখন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার কোনও শ্রদ্ধাভাজন সরাসরি শিক্ষক বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করলে নির্ধারিত বিভাগীয় সভাপতির চেয়ারটিতে বসি না। মাঝে মাঝে এজন্য নিজেকে বড্ড সেকেলে মনে হয়। তবে এই সেকেলেপনাই আমার কাছে ভালো লাগার।
এ তো গেলো নিজের ঢাক নিজে পেটানোর গল্প। এবার বলি নিজে কি দায়িত্ব পালন করছি। ঘর থেকেই শুরু করি। আমার সন্তানকে শিখিয়েছি গৃহশিক্ষক থেকে শুরু করে তোমাকে যারা শিক্ষা দেবেন, তারা তোমার পূজনীয়। মুচি থেকে শুরু করে মুদি দোকানদার পর্যন্ত সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। বাড়ির কাজের লোক তোমার বয়সে বড়, তাই তাকে আপনি বলবে, নাম ধরে ডাকবে না। তার হাতে তুলে দিয়েছি ঈশপের গল্পসমগ্র থেকে শুরু করে রবীন্দ্র,শরৎসমগ্র এবং দুই বাংলার প্রাচীন গল্পের বই। পাশাপাশি তাকে দিয়েছি পবিত্র কোরআন শিক্ষা, নামাজ শিক্ষা।
বাড়ির গৃহকর্মীকে শিখিয়েছি বাসার নিচ থেকে কেউ ফোন করলে আগে সালাম দিয়ে কথা বলবে। বাসায় কেউ এলে সালাম দেবে। গাড়িচালককে বলে দিয়েছি গাড়িতে কোনও অতিথি আরোহণ করলে সালাম দেবে এবং বর্ষার বৃষ্টিতে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরুলে কারও গায়ে কাদা ছিটিয়ে বীরদর্পে গাড়ি চালাবে না।
শিক্ষার্থীদের শেখানোর চেষ্টা করি, গ্রাজুয়েট হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হও। ভালো ফলের পাশাপাশি তোমাকে হতে হবে একজন ভালো মানুষ। বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা তোমার জীবন চলার চাবিকাঠি। শিক্ষকদের ফোন দিলে বা খুদেবার্তা প্রেরণ করলে তাদের আগে সালাম দেবে। কারণ, আমি সহকর্মীকে সম্মান করলে নিজে সম্মানিতই হবো, অসম্মানিত নয়। একযুগের বেশি শিক্ষকতায় আমার উপলব্ধি, একজন শিক্ষকের পক্ষে সব শিক্ষার্থীর স্মৃতি ধারণ করা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের চেহারা এবং নামটা মনে থাকে বেশি। কিন্তু প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে একজন শিক্ষক স্মরণীয় হয়ে থাকেন। তাই শিক্ষকের আচরণ হওয়া উচিত বৈষম্যমুক্ত ও বিতর্কমুক্ত। কারণ, শিক্ষার্থী শিক্ষকের সব আচরণ মনে রাখে। কোনও সহকর্মীকে ছোট করার জন্য কোনও শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করলে হয়তো এখন সেই শিক্ষার্থী মুখ ফুটে কিছু না বললেও জীবনের একপ্রান্তে গিয়ে সে যখন হিসাব-নিকাশ করতে শিখবে, তখন সে হয়তো ওই শিক্ষককে শ্রদ্ধা নাও করতে পারে। সুতরাং কাদামাটির মতো এই শিক্ষার্থীদের রুচিসম্পন্ন বিচক্ষণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করা উচিত।
তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হতে হবে নিজ গুণে গুণান্বিত মানুষ। শিক্ষকদের কাছ থেকে সামান্য কিছু সুবিধা লাভের আশায় নিজের ব্যক্তিত্বকে বিনষ্ট না করাই মঙ্গলজনক। শিক্ষার্থীর কাজ লেখাপড়া করা এবং ভালো মানুষ হওয়ার সাধনায় লিপ্ত থাকা। শিক্ষকের দোষ ধরে তাকে সমালোচনা করা শিক্ষার্থীর কাজ নয়। আর সংস্কৃত ভাষায় ‘ছাত্র’ শব্দটির বিশেষ অর্থ রয়েছে। ‘ছাত্র’ শব্দের অর্থ যে গুরুর দোষ ঢেকে রাখে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি সময় দেই অনেক। সময়টা এজন্য দেই যে, কতটা আমি শিখছি আর কতটা সবাই শিখছে সেই হিসাব-নিকাশের জন্য এবং খুঁজি লেখার খোরাক। একজন নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী হিসেবে বেশ কিছু বিষয় চোখে পড়েছে।
এখন আর কেউ বয়স চিন্তা করে কিছু লিখে না। একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অগ্রজ,অনুজ,সতীর্থ,সম্মনিত সকলেই থাকেন। চিন্তাভাবনা করে লেখা উচিত। এ বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবেন না। যার যা মনে হয় লিখছেন। সম্মানিত ব্যক্তিদের ছবি বিকৃতি করছেন। সংযত ভাষার প্রয়োগ নেই। সামাজিক মাধ্যমও একটি সমাজের মতো। সমাজে যেমন নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে, সামাজিক মাধ্যমেও তেমন কিছু আদব-কায়দা পালন করা উচিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি সামাজিক মাধ্যমের বিপক্ষে নই। কিন্তু এই মাধ্যম ব্যবহার করে কাউকে অপমানিত করা, ছোট করা,কারও ছবি বিকৃত করে নিজের মনমতো লেখার পক্ষে নই। বিনয় নম্রতা ভর করে যেকোনও মাধ্যম এগিয়ে যেতে পারে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু লেখা পড়ে সামাজিক মাধ্যমে আর থাকতে ইচ্ছে হয় না। ভাবতে অবাক লাগে, আমাদের বিনয়, আদব-কায়দা কোথায় যাচ্ছে। বলার অধিকার, লেখার অধিকার রয়েছে। কিন্তু কুরুচিপূর্ণ লেখা, সম্মানিত কোনও ব্যক্তিকে নিচে নামানোর জন্য নোংরা কথা বলে তাকে ছোট করা আদব-কায়দায় পড়ে না।
এখন সবাই কথা বলার সুযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখার সময় ভুলে যায় তার বয়স এবং অবস্থান। বিষয়টি তো এমন নয়, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের বন্ধু তালিকায় ভিন্নতা আছে। সুতরাং আদবকেতা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমের নিজ টাইমলাইনে পোস্ট দেওয়া,অন্যের পোস্টে কমেন্ট করাই বুদ্ধিমানের কাজ। শুধু টাইপ করতে জানলেই লিখতে হয় না। কখন কোথায় কী লিখতে হবে,কী ছবি কখন কোথায় পোস্ট করা যাবে, এসব বিষয় ভাবা উচিত। যত্রতত্র প্রাচ্য,পাশ্চাত্যের পোশাক পরে ছবি পোস্ট দেওয়া,যতটুকু না ভার তার চেয়ে বেশি ওজনের কথা বলা,আদবকেতার মধ্যে পড়ে না। তবে এক্ষেত্রে আমি যে বিষয়টি করি,তা হলো,যখনই দেখি আমার বন্ধু তালিকায় কেউ অহেতুক কথার সহিংসতা ছড়াচ্ছে,কোনও সম্মানিত ব্যক্তিকে অসম্মান করে কথা বলছে,তখনই তাকে আনফ্রেন্ড বা ব্লক করে দেই।
মার্ক জাকারবার্গ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক তৈরি করেছিলেন একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ককে জিইয়ে রাখতে। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দেশে কি তা হচ্ছে। এই মাধ্যম এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে কারও বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশের ক্ষেত্র হিসেবে, কোনও বিষয়ে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। অপরদিকে এই মাধ্যমে হিংসা, পরশ্রীকাতরতাও বাড়ছে। বাড়ছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ব্যক্তিজীবনেও এর প্রমাণ পেয়েছি। তবু সামাজিক মাধ্যমকে ভালোবেসে তার সঙ্গে জড়িয়ে আছি।
সামাজিক মাধ্যম যেমন সম্পর্কের বিস্তার ঘটাচ্ছে, তেমনি এক একজন মানুষকে একা করে তুলছে। রাস্তার প্রচণ্ড যানজটে যখন যাত্রী হাঁসফাঁস করতে থাকে,তখন সিটে বসে মনোযোগ দিয়ে ফেসবুকিং অথবা ম্যাসেঞ্জিং মানুষ করছে বেশিরভাগ মানুষ। কারও দিকে তাকানোর সময় নেই। মাঝে মাঝে দেখি তরুণরা গুচ্ছ হয়ে বসে আছে। অথচ সবাই ব্যস্ত ফেসবুক নিয়ে। কারও সঙ্গে কারও কথা বলার সময় নেই। কোনও রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাদ্যস্বাদ উপভোগ করার আগে প্রধান হয়ে ওঠে ছবি তোলা,সেলফি তোলা। কোথাও বেড়াতে গেলে বেড়ানোর জায়গা মন দিয়ে উপভোগ করার চেয়ে বেশি ব্যস্ত ছবি তুলে টাইমলাইনে শেয়ার করা। টাইমলাইনে এত অনুভূতি শেয়ার দেখতে গিয়ে পেলাম গত ঈদুল আজহায় কোরবানির গরুর পিঠে চড়ে ছবি। গরুর সঙ্গে সেলফি ও আরও অনেক রকম ছবি।
ব্যক্তিগতভাবে একসময় আমিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেড়াতে যাওয়ার প্রতিক্ষণের ছবি মুহূর্তে আপডেট দিয়েছি। কিন্তু এই প্রান্তে এসে উপলব্ধি,ছবি তুলবো, তা শেয়ারও দেবো, কিন্তু মুহূর্তে মুহূর্তে নয়। বেড়ানোর প্রতিটি ক্ষণ উপভোগ করাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। ব্যস্ত এই জীবনে বহু কষ্টে বের করা হয় পরিবার নিয়ে খেতে যাওয়া এবং ঘুরতে যাওয়ার সময়। সেই সময়টি একান্তে পরিবারকে দেওয়াই মানসিক প্রশান্তি হওয়া উচিত। প্রযুক্তিকে আমরা দাস বানাবো, কিন্তু প্রযুক্তি আমাদের দাস বানাক সেটা নিশ্চয়ই কাম্য নয়।
ফলবান বৃক্ষ নত হয় এবং বিনয়ের মাঝে আভিজাত্যের প্রকাশ পায়। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিনয় খুঁজি, খুঁজি ফলবান বৃক্ষ। লেখাটি যখন শেষ পর্যায়ে,তখন আমার ছেলেটা খুব আফসোস করে বলছে, আম্মু জেএসসিতে জিপিএ-৫ হয়তো পাবো না। আমি পরক্ষণেই তাকে বললাম,আমার জিপিএ ৫-এর দরকার নেই, আমি চাই তুমি ভালো মানুষ হও। মানুষের প্রতি সদয় হও। তুমি নিজেকে শিক্ষার্থী ভাবো, পরীক্ষার্থী নয়।
আশির দশকে আমি পৃথিবীতে এসেছি। এখন একুশ শতক। ব্যবধানটিও বেশি নয়। মনে হয় এই তো সেদিন। একুশ শতকের আচার আচরণ শিক্ষকের সঙ্গে, বড়দের সঙ্গে কথা বলার ধরন আমাকে আতঙ্কিত করছে। ভাবিয়ে তুলছে আমাকে, আমাদের আদবকেতার মাপকাঠি সঠিক স্থানে আছে তো? নাকি ধীরে ধীরে স্থানচ্যুত হচ্ছে।
ছেলেবেলায় শিখেছিলাম, সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। এখন হয়তো সুশিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু স্বশিক্ষিতের সংখ্যা কি সমানতালে বাড়ছে না কমছে সেটি চিন্তার বিষয়। কাজী মোতাহের হোসেন লিখেছিলেন, মানুষ স্বভাবতই দ্বিজ। অর্থাৎ মানুষ দুইবার জন্মগ্রহণ করে। প্রথমত, কীটপতঙ্গের ন্যায় মানুষও জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর লেখাপড়া করে নিজ গুণে মানুষ দ্বিতীয়বার জন্মগ্রহণ করে। সেই শিক্ষা থেকে নিজেকে স্বশিক্ষিত করার চেষ্টা করছি এবং মানুষ হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।
সমাজের নানা বিষয় নিয়ে কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠের সঙ্গে আলোচনা করার সুয়োগ হয়। তাদের একটিই কথা, ধর্মীয় শিক্ষা বাড়াতে হবে এবং পারিবারিক বন্ধন বাড়াতে হবে। বিস্তার ঘটাতে হবে সংস্কৃতির।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পক্ষে আমি। তাই বলে যুগের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ার পক্ষে আমি নই। ভারতচন্দ্রের চিরায়ত বানী ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। আর আমি বলি,আমার সন্তানের পান করা দুধটি যেন হয় নির্ভেজাল।
সবার প্রতি বিনীত আহ্বান, চলুন প্রজন্মকে সবুজ দেখাই,স্বপ্ন দেখাই,আকাশ দেখাই, আনন্দের রঙিন বেলুন ওড়াতে শেখাই। দেখাই কাশবন, নদী নৌকা আর পাহাড় সমুদ্র। শেখাই সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা, নম্রতা, শালীনতা, বিনয় ও ভদ্রতা। তাতেই মুক্তি, তাতেই সার্থকতা।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠকের মতামত